পিতা-মাতার হক যেভাবে আদায় করতে হয়
১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম
আমরা পৃথিবীর আলো দেখতে পেয়েছি আল্লাহর রহমত ও পিতামাতার বদৌলতে। পৃথিবীর দ্বিতীয় মহা পাপ হলো পিতামাতার অবাধ্য হওয়া। ইসলামে পিতামাতার মর্যাদা অনেক উঁচুতে স্থান পেয়েছে। তাদের প্রতি সেবামূলক আচরণ, সম্মান প্রদর্শন এবং অধিকার আদায় করা প্রতিটি সন্তানের জন্য ফরজ বা অপরিহার্য। কুরআন এবং হাদিসে বারবার পিতামাতার সঙ্গে উত্তম আচরণ এবং তাদের হক আদায়ের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।
কুরআনে পিতামাতার অধিকার : কুরআনে পিতামাতার হক আদায়ের জন্য বারবার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত করবে এবং পিতামাতার সঙ্গে সদাচরণ করবে। তাদের মধ্যে কেউ বা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদের প্রতি ‘উফ’ শব্দও উচ্চারণ করো না এবং তাদের ধমক দিও না। বরং তাদের সঙ্গে সুন্দরভাবে কথা বলো।’ (সুরা ইসরা : ২৩)। এই আয়াতটি থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, আল্লাহ তায়ালা পিতামাতার প্রতি সন্তানের সেবা ও সম্মান প্রদর্শনের বিষয়ে কতটা কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন। তাদের প্রতি সামান্যতম অসৌজন্যমূলক আচরণও আল্লাহ পছন্দ করেন না। হাদিসে বলা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘পিতা-মাতার সন্তুষ্টি আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং পিতা-মাতার অসন্তুষ্টি আল্লাহর অসন্তুষ্টি।’ (তিরমিজি)। এর মানে হলো, পিতামাতার খেদমত ও তাদের সেবা করা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের একটি উত্তম মাধ্যম।
পিতামাতার হক বা অধিকারকে আমরা কয়েকটি মূল দিক থেকে ভাগ করতে পারি : সেবা ও খেদমত। পিতামাতার হক আদায়ের অন্যতম বড় উপায় হলো তাদের প্রতি যথাযথ সেবা ও খেদমত করা। আমাদের পিতামাতা যে পরিমাণ ত্যাগ স্বীকার করে আমাদের লালন-পালন করেছেন, তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। যখন তারা বৃদ্ধ হয়ে যান, তখন তাদের চলাফেরা, খাবার দাবার ও অন্যান্য প্রয়োজনে সহায়তা করা সন্তানের কর্তব্য। সম্মান ও ভালো ব্যবহার। ইসলামে পিতামাতার সাথে সর্বদা সম্মানজনক ও নম্র ব্যবহার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কখনো তাদের প্রতি খারাপ ভাষা ব্যবহার করা বা অবজ্ঞাসূচক কথা বলা উচিত নয়। হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা তোমাদের পিতা-মাতাকে সম্মান করো এবং তাঁদের সাথে সুন্দর আচরণ করো।’ (মুসলিম)।
তাদের জন্য দোয়া করা : কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘তোমার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন ... তাদের জন্য এই দোয়া করো, হে আমার প্রতিপালক! তাদের প্রতি অনুগ্রহ করো, যেমন তারা আমাকে শৈশবে লালন-পালন করেছিলেন।’ (সুরা ইসরা : ২৪)। পিতামাতার জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা, তাদের দীর্ঘায়ু ও শান্তি কামনা করা সন্তানের দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত। তাদের সকল প্রয়োজন মেটানো। পিতামাতার হক আদায়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তাদের আর্থিক চাহিদা পূরণ করা। যদি পিতামাতা আর্থিকভাবে দুর্বল থাকেন, তবে তাদের প্রয়োজন মেটানো সন্তানের কর্তব্য। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘তোমার উপার্জন থেকে পিতামাতার জন্য খরচ করো, কেননা তাদের প্রয়োজন পূরণ করাও তোমার দায়িত্ব।’ তাঁদের সাথে সময় কাটানো। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পিতামাতার একাকিত্ব বেড়ে যায়, এবং তারা সন্তানের সঙ্গ চায়। তাদের সঙ্গে সময় কাটানো, তাদের খোঁজ খবর নেওয়া, সুখ-দুঃখে পাশে থাকা, এসবই তাদের অধিকার। সন্তান যদি সবসময় ব্যস্ত থাকে এবং পিতামাতার প্রতি খেয়াল না রাখে, তাহলে তারা একাকিত্ব ও হতাশায় ভুগতে পারেন।
পিতামাতার দুআয় বারাকাহ লাভ। পিতামাতার দোয়া সন্তানের জন্য একটি বড় হাতিয়ার। পিতামাতা কোনো সন্তানের জন্য দোয়া করলে সাথে সাথে আল্লাহ তায়ালা কবুল করেন। একজন সন্তানের জন্য পিতামাতার দোয়া আল্লাহর কাছে সবচেয়ে মূল্যবান দোয়ার মধ্যে একটি। হাদিসে এসেছে, ‘তিনটি দোয়া অবশ্যই কবুল হয়—প্রথমত, মজলুমের দোয়া, দ্বিতীয়ত, মুসাফিরের দোয়া, এবং তৃতীয়ত, পিতা-মাতার দোয়া।’ (তিরমিজি)। মৃত্যুর পরেও পিতামাতার হক আদায়। পিতামাতার হক শুধু তাদের জীবিত থাকা অবস্থায়ই সীমাবদ্ধ নয়; মৃত্যুর পরও তাদের জন্য কিছু হক রয়েছে। সদকায়ে জারিয়া বা দান-সদকা করা। সন্তানরা তাদের পিতামাতার জন্য সদকায়ে জারিয়া বা স্থায়ী দানের কাজ করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, মসজিদ নির্মাণ, পানি ব্যবস্থা, কিংবা দরিদ্রদের জন্য খাদ্যের ব্যবস্থা করে তাদের জন্য সওয়াবের কাজ করা যেতে পারে। সন্তানের নেক কাজও তাদের জন্য সদকায়ে জারিয়া। এজন্য আমাদের সকলের উচিত মৃত্যুর পূর্বে নেককার সন্তান তৈরি করে রেখে যাওয়া।
ঋণ পরিশোধ করা। পিতামাতা মৃত্যুর আগে যদি কোনো ঋণ রেখে যান, তবে সন্তানের দায়িত্ব তা পরিশোধ করা। ইসলাম এ বিষয়ে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। পিতামাতার অধিকার আদায়ে কিছু প্রয়োজনীয় পরামর্শ : ধৈর্য ও সহনশীলতা: পিতামাতার প্রতি ধৈর্য সহকারে যতœশীল থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে যখন তারা বার্ধক্যের কারণে অস্থিরতা বা শারীরিক অসুস্থতার সম্মুখীন হন। পিতামাতার সাথে সবসময় নম্র ভাষায় কথা বলা এবং তাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ করা উচিত। কাজের ব্যস্ততা থাকলেও কিছু সময় আলাদা করে তাদের সঙ্গে কাটানো উচিত, যাতে তারা সন্তানের কাছ থেকে ভালোবাসা ও যতœ অনুভব করেন।
পিতামাতার চাহিদাগুলো বুঝে তাদের সেগুলো পূরণে চেষ্টা করা জরুরি।নিয়মিত যোগাযোগ রাখা বিশেষত যেসব সন্তান বাইরে থাকেন, তাদের উচিত নিয়মিত পিতামাতার খোঁজ নেওয়া এবং প্রয়োজনমতো তাদের পাশে থাকা। তাদের আল্লাহ তায়ালা এই বলেনি যে তোমরা যখন প্রতিষ্ঠিত হয়ে বিয়ে করবে তখন তোমরা শুধু চাকুরির করবে আর শ্বশুর বাড়িতে আড্ডা দিবে। শ্বশুর শাশুড়ি তৃতীয় শ্রেণীর আত্মীয় যাদের সাথে রক্তের সম্পর্কও নেই, সম্পদের ভাগও পাবে না। পিতামাতার জন্য কিছু কিনতে গেলে সেখানে পাল্লার অপর পাশে কখনই শ্বশুর শাশুড়ি বসতে পারে না। কিন্তু আফসোস বর্তমান যুবকেরা বিশেষ করে বিবাহিত মুসলিম যুবকেরা পিতামাতার অধিকার পালনে দৃঢ়ভাবে ব্যর্থ। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে হেফাজত করুক।
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
পরলোকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং :ভারতে ৭ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা
কালীগঞ্জে রাঙ্গামাটিয়া ধর্মপল্লীর সংবাদ সম্মেলন
গ্রাম আদালত সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরিতে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত
মিসরে প্রেসিডেন্ট সিসির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ
কুর্দি যোদ্ধাদের ভয়ঙ্কর হুঁশিয়ারি এরদোগানের
৩৫শ’ এজেন্টের অধিকাংশই গুজরাটের পাচারকারী
৫ সাংবাদিককে হত্যা করল ইসরাইল বিমান
তুষারপাতে অচল হিমাচল দুই শতাধিক রাস্তা বন্ধ
ক্রিপ্টো রিজার্ভ গড়বেন ট্রাম্প?
মোজাম্বিকে কারাদাঙ্গায় নিহত ৩৩, পলাতক ১৫০০ কয়েদি
গাজায় যুদ্ধবিরতি বিলম্বে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ হামাস-ইসরাইলের
পাকিস্তানে সড়ক অবরোধে শতাধিক শিশুর প্রাণহানি
আফগানিস্তানে ৭১ সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে পাকিস্তান
শুধু নারীদের জন্য
নিথর দেহ
আত্মহননে
জকিগঞ্জে প্রাক্সিসের ৭ দিনব্যাপী ইংলিশ স্পিকিং চ্যালেঞ্জ কম্পিটিশনের পুরস্কার বিতরণী
মাদ্রাসার ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে শিশুর মৃত্যু
গাজীপুরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় বিএনপি নেতাদের ভিড়
শুধু নামেই জিমনেসিয়াম